মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬

বউ ও রোজা

এমনিতেই রোজার মাসে আমাদের মত ব্যাচেলর
দের কে অনেক প্রবলেম ফেস করতে হয়।
তবে সব চাইতে বড় প্রবলেম টা হয় সেহরী
খাওয়া নিয়ে। যেমন আমার হচ্ছে। রোজার আগে
রাতে হোটেল এ খাওয়া দাওয়া করতাম কিন্তু
সেহরীর সময় হোটেল ও বন্ধ থাকে তাই রুটি
কলা খেয়ে রোজা থাকতে হয়।যেটা খুবই কষ্ট
কর ব্যাপার।
.
বাসায় যে চলে যাব তারো কোন উপায় নাই।
অনেক গুলা টিউশন মিস হয়ে যাবে তাহলে । রান্না
বান্না অবশ্য পারি হালকা তবে সারাদিন রোজা রেখে
রান্না করার ও কোন প্রশ্নই আসেনা।
.
মেসে থাকলে অবশ্য এমন প্রবলেম হত না,কিন্তু
আমি মেসে থাকিনা।ভাল লাগেনা থাকতে।মোটামুটি
ভালই টাকা পয়সা ইনকাম করি তাই ভাড়া বাসাতেই একা একা
থাকি।
এ বাসায় আমি ভাড়া থাকি দোতলায়, দোতলায় অবশ্য
আমি একা থাকি না।আরো একটা ফ্যামিলি থাকে,তবে
ওরা নাই এখন। রোজায় গ্রামের বাড়িতে চলে
গেছে।
ওরা থাকলেও কিছু একটা ব্যাবস্থা করা যেত।
.
নিচে অবশ্য বাড়িওয়ালার ফ্যামিলি থাকে,তবে ওদের
কাছে সাহায্য চাওয়ার কোন মানে হয়না। বাড়ি ওয়ালার
সাথে আমার সম্পর্ক খুব খারাপের দিকে।
.
গতকালকের সেহরীতে রুটি আর কলা খেয়ে
ছিলাম,আজও একই কাজ করতে হবে।
তাই মুখ ধুয়ে এসে খাবার নিয়ে বসছি।তখনি গেট
ধাক্কানোর শব্দ।
একটু অবাকই হলাম,এত রাতে আবার কে?
.
গেট খুলে দেখি দিবা দাঁড়ায় আছে। মনে হচ্ছিল ওই
হবে। কারণ বাড়ি ওয়ালা যেচে আসবে না আমার
কাছে।তবে বাড়িওয়ালার মেয়ে আসতেই পারে।
.
গেট খুলে দিতেই দিবা সোজা হন হন করে
ঘরের ভিতর ঢুকে গেল।
বিছানায় বসে রুটি আর কলার দিকে তাকিয়ে বলল,
-এগুলা খাবা?
-হুম,
-অসুবিধা হবেনা,
-একটু হবে,ভাবছিলাম তুমি আমার জন্য খাবার নিয়ে
আসবা।
-শখ কত?
-শখের কি,প্রেমিকের জন্য এতটুকু করতে
পারবানা।এত কষ্ট করে রোজা রাখি দেখনা?
-উম,দেখি তো জান,
-কিছু করো তাহলে,
-হুম,করব।
-আর তুমি এখন এখানে কেন?
তোমার আব্বা খুঁজতে খুঁজতে এখানেই আসবে
দেখিও,
-আসবেনা,
-কেন?
-আব্বুই পাঠাইছে তোমাকে ডাকতে,
-বল কি? তোমার বাবা এত ভাল হইল কিভাবে?
-আমার আব্বু আগে থেকেই ভাল,
-তা ঠিক আছে। কিন্তু রাজি হইল কিভাবে?
.
এবার দিবার মুখে হাসি ফুঁটল।তবে আমি একটু
অবাকই,দিবার বাবা আমাকে অপছন্দ করেন,কঠিন রকম
অপছন্দ।
অবশ্য দিবার বাবার সাথে আমার আগে ভালই সম্পর্ক
ছিল,তবে যবে থেকে উনি ধরে ফেলেছেন
আমার আর দিবার মধ্য কিছু চলছে তখন থেকেই
আমাকে দুচক্ষে দেখতে পারে না।
এমন কি? বাড়ি ছাড়ারও অর্ডার ও দিছেন, আমি কোন
ভাবে ঈদ পর্যন্ত সময় নিছি।
তবে এখন উনি এত ভাল হচ্ছেন কিভাবে কে
জানে?
.
দিবা হাসি মুখেই বলল,
-বাবাকে বলছি,আমরা রেজিষ্ট্রি করছি।
-বলো কি?
-হুম,
-রাগ হয়নি,
-হইছে,কিন্তু কি আর করবে?
একটু আগে যখন খেতে বসব তখনি বাবা বলল
তোমায় ডেকে আনতে।
-খুব ভালো,,কাজের কাজ করছ একটা।
কিন্তু রেজিষ্ট্রি র কাগজ চাইলে?
-তা তো জানিনা?
-এক কাজ করব,কাল সকাল সকাল কোর্ট এ গিয়ে
রেজিষ্ট্রি করে আসব,
-সত্যি?
-হুম,
.
দিবার প্রতি খুশি হলাম,কাজের কাজ করছে একটা।
মেয়েটা এমন একটা বুদ্ধিমানের মত কাজ করবে
কে জানত।
.
দিবার সাথে সোজা গিয়ে উপস্থিত হলাম ওর বাসায়।
দিবাদের বাসায় ব্যাচেলর ছেলে কখনো এলাও
ছিল না,তবে আমার মামার বন্ধু দিবার বাবা তাই আর কি
বিশ্বাস করে বাসা ভাড়া দিয়েছিল।কিন্তু যখন দিবাকে
প্রথম দেখলাম সেদিন থেকে আর বিশ্বাস রাখতে
পারিনি। যে কোন মূল্য আমি দিবাকে চাইতাম।আর
কোন এক ভাবে আমাদের প্রেম ও হয়ে যায়।
.
দিবাদের বাসায় এ নিয়ে আমি কয়েক বার আসছি।
আগে মাঝে মাঝে আমার দিবাদের বাসায় খাওয়া দাওয়ার
সৌভাগ্য হত কিন্তু অনেক দিন থেকেই সেটা বন্ধ
হয়ে আছে।
দিবাদের ডাইনিং এ গিয়ে দেখি দিবার বাবা বসে আছে
খুবি গম্ভীর মুখ নিয়ে।যথাসম্ভব উনি আমাকে
ডাকতে চাননি, দিবার মায়ের জোড়াজুড়িতে
ডেকেছেন।দিবার মা মহিলা ভাল, খুবই ভাল।আমার প্রতি
ওনার কোন সমস্যা নাই। যা সমস্যা সবই দিবার বাবার।
.
দিবার বাবার চোখের সাথে চোখ পরা মাত্রই আমি
সালাম দিলাম।উনি উত্তর না দিয়ে আমাকে বসতে
বললেন।আমি বসে পরলাম একটা চেয়ারে।আমাকে
বসিয়ে দিবা কিচেনে চলে গেল।আমি আর দিবার বাবা
একা রয়ে গেলাম ডাইনিং রুমে।আমি কঠিন কিছু
শোনার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম কিন্তু তেমন কিছু হল না।
ততক্ষনে ঘরে দিবার মায়ের প্রবেশ,আমাকে
দেখেই বললেন,
-তুমি আসছ বাবা?
-জ্বি আন্টি,
-ভাল করছ,একা একা কি না কি খাবা,
.
আমি উত্তর দিলাম না তবে সামান্য একটু হাসলাম।
খাবারের আইটেম দেখে মন খুশি হল।
কতদিন এরকম খাইনা?
জামাই মানুষ খেতে আসছি,রান্না তো ভাল হতেই
হবে।
যদিও সেহরীর সময় খাওয়ার বেশি রুচি হয়না তবে
খাবার টেবিলে ভাল কিছু থাকলে সামান্য হলেও রুচি
বাড়ে।
.
ততক্ষনে দিবা চলে আসছে।দিবা এসে আমার
পাশেই বসল। আমি ওকে ইশারায় বলে দিলাম ওর বাবা
কিছু বললে যেন চুপ করে থাকে।যা উত্তর দেয়ার
আমি দিব।
.
ভাত মুখে দেওয়ার আগ মুহূর্ত এ দিবার বাবা
জিজ্ঞেস করল,
-কবে করছ তোমরা?
.
আমি উত্তর দিলাম,
-কি?
.
দিবা আস্তে করে পাশ থেকে বলল,
-রেজিষ্ট্রির কথা বলতেছে।
-ওহ,,,
.
আমি দিবার বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
-গত সপ্তাহে,
-আচ্ছা,খাও,
.
খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত আর কোন কথা হল
না,তবে আমি ভেবেছিলাম দিবার বাবা আরো কিছু
জিজ্ঞেস করবে?সে রকম প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম।
খাওয়া দাওয়া অবশ্য ভালই হল,দিবা দুই একটা আইটেম
নাকি রান্না করেছে সেগুলো আমার প্লেটে দিল।
মাঝে মাঝে খাচ্ছিলাম আর দিবার বাবার দিকে
তাকাচ্ছিলাম, ওনাকে দেখতে ভয়ই লাগছিল। বড় বড়
চোখ করে তাকিয়ে ছিলেন।
.
খাওয়া শেষ করতেই দিবার মা বলল,
-তোমার বাসায় জানে তোমাদের বিয়ের কথা?
.
আমি অবাক হয়ে বললাম,
-বিয়ে!
.
দিবা পাশ থেকে বলল,
-হ্যাঁ,আম্মু জানে।
.
আমি কি বলব ভেবে পেলাম না,কি হচ্ছে তাও জানিনা।
কোন রকম দিবাদের বাসা থেকে বের হয়ে
সোজা আমার ঘরে আসলাম।আমার পিছন পিছন দিবাও
আসল।
-এই তুমি ঠিকাছ?
-কি বলছ তুমি?
-বলছি বিয়ে করছি?
-তুমি না বললা রেজিষ্ট্রি করার কথা বলছ?
-ওটা বললে কাজ হত না,
-তাই বলে তুমি,
-হুম,তুমি একা একা কষ্ট করে এসব খাও, আমার ভাল
লাগেনা,,
-ও আচ্ছা,ধন্যবাদ।
.
দিবা কিছুক্ষন পর আবার বলল,
-এই তুমি কি রাগ করছ?
-নাহ,,রাগ হইনি।শুধু আশ্চর্য হইছি,ভাবতে পারিনি তুমি এমন
করবা,
-তাহলে হাসি মুখে একটা ধন্যবাদ দেও
.
আমি দিবার কথা শুনে হেসে ফেললাম।
-আচ্ছা,ধন্যবাদ।
.
কাজটা ভাল না খারাপ হইছে ঠিক বুঝতেছিনা।তবে
মনে হচ্ছে ভাল।বিয়ে তো দিবাকে করতেই
হবে,তো আগে থেকে জানলেই বা সমস্যা কি?
আরামসে রোজার মাস টাতো কাঁটবে তাই অনেক।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন