বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ভালবাসি তোমার সবকিছু



আমি ওনাকে প্রথম যে উপহার দেই তা "এক
প্যাকেট
বেনসন লাইট"!
উনি আমায় প্রথম যা দেন তা, হুমায়ুন আজাদ এর
সম্পাদনায় একটি "কবিতার বই"।
প্রথম উপহারটা দেওয়া হয়েছিল বাক্সে এঁটে। ও
এবড়ো থেবড়ো রিকসার ঝাঁকুনির মাঝেই একটা পর
একটা বাক্স খুলছিল। শেষ বাক্স,অর্থাৎ সিগেরেট
এর বাক্সটা দেখে সে চমকে উঠে আমার দিকে তাকালো।
আমি হালকা হেসে মাথা নিঁচু করেছিলাম।
আমি সিগেরেট খাইওনা,পছন্দও করিনা। অথচ
সিগেরেট তার অভ্যেস।উপহারের মাধ্যমে শুধু তাকে
একটা মেসেইজ দেবার ছিল… "আপনার
সত্ত্বা,স্বাধীনতা পছন্দ বা অভ্যেস আমি কেড়ে
নিবোনা। এবং একি সাথে আমারটাও আপনি নেবেন না
আশা করি।চলুন এভাবেই শুরু করি প্রেম?!"
সে করেছে।আমার নিঃশব্দ আকাঙ্খা বুঝেছে
নিঃশব্দেই…
। সাব্বির রাগী,সাব্বির রুড
,সাব্বির চুপচাপ,সাব্বির ডোন্ট কেয়ার, সাব্বির
এটা দেখতে পারেনা ওটা পছন্দ করেনা কিন্তু
দিনশেষে সে আমার সাথে প্রাণখোলা,আমার চিন্তার
সে একমাত্র সহায়ক,আমার বিপদের সে অন্যতম
প্রিয় বন্ধু,আমার এডভেঞ্চারের সে একমাত্র
সঙ্গী,আমার হাসির সে দর্শক,আমার আবৃতির সে
একমাত্র শ্রোতা,আমার গল্পের সে একমাত্র
পাঠক,আমার পার্সোনালিটির সে একমাত্র
ফ্যান,এবং আমি যখন ডিপ্রেশন এ ভুগি সে
একমাত্র প্রভাবক যে বলে "তুমি যা করেছো,ঠিকই
করছো। তোমার যেকোনো সিদ্ধান্ত আমি শ্রদ্ধা
করি।কারণ তুমি জ্ঞানী। তোমার চিন্তা
বিস্তর।"!
আমি হাসি। হাসতেই থাকি।
ওর আমার উপহার দেওয়া নেওয়া সাধারণের মাঝেও
অসাধারণ।আমাদের ধারণা আমাদের মেয়ে হবে। এর
মাঝেই দেয়া নেওয়া হয়ে গ্যাছে
এক জোড়া ছোট্ট রাজকন্যার পায়ের জুতো, ছোট্ট
মোজা,ছোট্ট ফ্রক,(আমাদের মেয়ের চুল বড় হবে)তাই,
চুলের ক্লিপ, খেলনা… কত্ত কিছু!
আরো আছে ম্যাচ-কাঠির ঘর,লিখার খাতা,রিচড
ব্যান্ড,কালো টিপ,কাঠের চুড়ি,কবি ব্যাগ,অসংখ্য
বই অসংখ্য স্বপ্ন।
ভেবে চিন্তে দেখে শুনে আমরা একে অপরকে সে সকল
জিনিস ই দিয়েছি "যা আমার পছন্দ,আমার স্বপ্ন
নয়," যা ওর স্বপ্ন ওর উচ্ছাস"! …
কবে যেন ওর আমার স্বপ্ন একি হয়ে গ্যাছে টের
পাইনি।
গত রাতে একপ্রকার ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। ঘুম
ভাঙলো তার ফোন কলে। হ্যালো বলার সুযোগ দিলনা
অপরপক্ষ। হরবর করে বলে গেল কি যেন… এই কি
যেন টা শুনতে বুকে খুব শান্তি পেলাম। " পারভেজ দা
ফোন করেছিলেন। বলেছেন আমি খুব ভালো
লিখি,আমি খুব ভালো জানি।যুগান্তরের স্পোর্টস
ডেস্ক টা এখম আমাকেই ডাকছে।আমি চাকরি পেয়েছি
চূড়া…"
কত অদ্ভুদ অদ্ভুদ কষ্টের দিন কেটেছে। কতদিন
মেইনস্ট্রিটে হাঁটাহাঁটি।বাসে ঝুলে ঝুলে ডেটে
যাওয়া,ব্যাংক ভেঙ্গে বইম্যালা,খুচরা পয়সা জমিয়ে
দেওয়া "নাইন্টি নাইনের গিফট"..রিকশা একটু
আধটু রোদে ঘোরা, দোকানে দোকানে চায়ের কাপে দশ
এর ভেতর নাম্বার দেওয়া, মাঝ রাত্তিরে টি এস সির
টিভিতে দেখা বাংলাদেশের ম্যাচ। কালো এই জঞ্জালে
ভরা মিথ্যে কথার শহরে তোমার আমার লাল নীল
সংসার…
সত্যি বলছি! কানের মাঝে অনবরত বেজে চলছে
"চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি চূড়া শুনছো…
সাংবাদিক সাহেব এখন সত্যি সত্যি সাংবাদিক।
ছোট মানুষ! হালকা কাঁধ! সে নাকি শার্ট টা ইন করে
অফিসে যাবে! হাহা… খুব খুশি হয়ে হরবর করে
বললাম… "কনগ্র্যাটস সাব্বির! আমি আপনার টাই
বেঁধে দেবার লোভ সামলাতে পারছিনা!" মুচকি হেসে
আমায় অবাক হয়ে সে জানিয়ে দিল… "তুমি অফিসে
যাবে, শাড়ির কুচি তো ঠিক করে দেবো আমি! প্লিজ
ভালো করে পড়ো। আমিও লোভ সামলাতে পারছিনা।"
#Collected_From:-#Kameliya_Sharmin_Chura

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন