প্রায় ৩০মিনিট ৩৩সেকেন্ড ধরে আমাদের এলাকার
সবচেয়ে ডেঞ্জারাস মেয়ের ভাই আমাকে
সেই রকমের প্যাঁদানি দিল।শরীরের প্রত্যেকটা
স্ক্রু যাতে ঢিলা হয় তাতে কোন কিপটামি করেননি।
একদম নিজে প্রত্যক্ষভাবে যথাযথভাবে কাজটি
করেছেন।ঘড়ি দেখে সময়টা আবার নিশ্চিত করলাম।
৩০ মিনিট ধরে ধোলাই দিলো সেটা না হয়
মানলাম,কিন্ত এই ৩৩সেকেন্ডেও দিলো!!!শালার
মনুষত্ব নাই বললেই চলে,পুরাই হিটলারের বংশধর।
ঠিকভাবে দাড়াতেই পারছিনা।শালারা স্ক্রুই মনে হয়
গায়েব করে দিছে।নিজেকে দেখে নিজেই
চিনতে পারতেছিনা।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল
মারই বা কেন খেলাম সেটাও জানি না।শরীরের সব
জায়গায় ট্যাটুর দাগ হয়ে গেছে।ট্যাটু বলতে ওই
যে আদর করার সময় কিছু রক্ত জমাট বাধা কালো
কালো জায়গা সৃস্টি হইছে ওগুলাই আরকি।যাইহোক
মার খাওয়ার কারন আর স্ক্রুহীন শরীর নিয়ে
খোড়াতে খোড়াতে একটা মেডিসিন এর
দোকানে আসলাম।কারন এই অবস্থায় যদি মা আমাকে
দেখেন তাহলে হয়ত উনি নিজেই হাসপাতালে
যাবেন না হয় আমাকে পাঠাবেন।তাই একটু ব্যান্ডেজ
করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
মার খাওয়ার কোন কারন খুজে পাচ্ছিনা।হঠাৎকরেই
নীলিমার ভাই বা আমাকে কেন মারলেন।ওহ নীলিমা
হল ওই বজ্জাতের বোন।ভাই যেমন বজ্জাত
বোনটাও তেমন ডেঞ্জারাস।কারন ওই মেয়ে
কখন কি করে তা কারো মাথায় ঢুকে না।এলাকার
ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে
প্রত্যেকেরই ধারনা এই মেয়ের একটু হলেও
মাথায় সমস্যা আছে।যেমন পরশুদিনকার ঘটনা,,,,,,
আমি বাজার করে ব্যাগ হাতে বারি যাচ্ছি এমন সময়
কোথাথেকে যেন নীলিমা আমার সামনে এসে
দাঁড়িয়ে গেল।আমি হকচকিয়ে অবাক হয়ে ওর দিকে
তাকালাম।দেখি আমাকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত
কয়েকবার দেখল।তারপর কয়েকবার আমার চারপাশে
ঘুরে ঘুরে কি যেন পর্যবেক্ষন করল।আমি
জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,
:আপনি কি কিছু বলবেন?(গুরুগম্ভিরভাবে বললাম)
দেখি ও আমার দিকে দুই পা এগিয়ে এল।আমি কিছুই
বুঝতেছিনা।কিছু বুঝার আগেই আমার হাত থেকে
হ্যাচকা টান মেরে ব্যাগটা ওর হাতে নিল তারপর
মনোযোগ দিয়ে কি কি আছে দেখল।আমি আবার
জিজ্ঞাসা করলাম,,,
:আপনি কি কিছু খুজছেন?(আমি ওর এই কর্মকান্ড
দেখে অবাক হওয়ার শেষ পর্যায়ে)
দেখি এবার ও দুই পা পিছিয়ে গিয়ে ব্যাগটা আমার
দিকে এগিয়ে দিয়ে চোখের ইশারায় ব্যাগটা ধরতে
বলল।আমি ব্যাগটা ধরেই কিছু বলতে যাব ওমনি ও
বলে উঠল,,,,,
:মাংস কম খাবেন।(নীলিমা)
আমিতো পুরাই অবাক।কোন আগা-মাথা নাই হঠাৎ
করেই কথাটা বলে ফেলল।আমি কিছু না বুঝতে
পেরে আবার বললাম,,,,
:জি!!!!!!!!!!(আমি)
ও আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নিজের মত
করে বলছে যেন আমি কোন পুতুল আর আমার
কোন জ্ঞান বিবেক নেই,আমি শুধু শ্রোতা আর
ওর কথা আমাকে বাধ্যতামূলকভাবে শুনতেই হবে।
আর এবারও আমাকে বলার কোন সুযোগ না দিয়েই
ও বলল,,,,,
:শাক-সবজি বেশি করে খাবেন(কথাগুলো এমন
ভাবে বলছে মনে হচ্ছে সে নিজে ডাক্তার আর
আমি ক্যান্সার এর লাস্ট স্টেজ এর রোগী আর
আমি তার পা ধরেছি যেন আমি ১মিনিট বেশি বাচি)।
(নীলিমা)
কথাটা বলেই ও উলটাদিকে হাটা শুরু করল।আমি কিছু
বলতে যেয়েও কেন যেন কিছু বলতে পারলাম
না।বাসায় যেয়ে ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুজছি।মাংস কি
মাংসের এক টুকরো পর্যন্ত পাইনাই।যদিও মাংস আমার
খুব পছন্দ কিন্তু সেদিন মাংস নেইনি কারন বাসায় মাংস
ছিল আর মা শুধু শাক-সবজি আনতে বলেছিল।
যাইহোক সেদিন মেয়েটির ওই রহস্যজনক
কর্মকান্ড গুলোর ব্যাখ্যা আমি পাইনি আর সত্যি
বলতে সেভাবে ভাবাও হয়নি কারন আমি একরকম
ধরেই নিয়েছিলাম যে মেয়েটা পাগল মানে পাগলি।
সেইদিন যাকে পাগল মানে পাগলি ভেবেছিলাম তার
ভাই আজ আমাকেই মেরে আধাপাগল বানিয়ে
ফেলেছে।কারন এই অবস্থায় যে কেউ আমাকে
দেখলে পাগলই ভাববে।আর যদি ভাবেও তাতেও
আমার আফসোস নাই কারন পাগল বললেও
অন্ততপক্ষে শিক্ষিত পাগল বলবে।শিক্ষিত পাগল
কথাটা মাথায় আসতেই নিজের উপর কেন জানি
গর্ববোধ হতে লাগল যার বহিঃপ্রকাশ হল একটুকরো
মলিন হাসি।
ভাবতে ভাবতে কখন যে বারির সামনে চলে আসছি
খেয়ালই নেই।দরজায় যেয়ে কলিংবেল চিপার
কিছুক্ষণ পরেই মা দরজা খুলে দিল।ভিতরে ঢুকতে
না ঢুকেতেই মা বলল,,,,
:কিরে তোর আবার কি হল?(আমাকে এভাবে
দেখে মানে স্ক্রু বিহীন দেখে যে মারও মাথার
স্ক্রু প্রায় ঢিলা হয়ে আসছে তা আমি বুঝে গেলাম)
(মা)
:আরে ওসব কিছু না।ওই একটু সমস্যা হইছে
তো,মানে সমস্যায় পরছিলাম তো,মানে একটু
এক্সিডেন্ট হইছিল তো তাই।(আমি খালি তোতলাচ্ছি
কারন মিথ্যা বলায় আমার মত অপারদর্শী খুজে পাওয়া
ঢের)
আর কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।একটু ফ্রেশ
হয়ে শুয়ে পরলাম।কারন ক্লান্তি তো লাগছিলই আর
সাথে সাথে ব্যাথাটাও একটু একটু করে বাড়ছিল।আমি
কোনভাবেই আমার আদর পাওয়ার সেই করুন
দৃশ্যের কোন কারন খুজে পাচ্ছিলাম না।ভাবতে
ভাবতেই সেদিনের কথাটা মনে পরে গেল,,,,
সেদিন আমার কিছু দরকারি কাগজের দরকার ছিল তাই
ভার্সিটি তে গেলাম সেগুলো আনতে।
কাগজগুলো তুলতে একটু সময় লেগে গেল।
যেই ভার্সিটি থেকে বের হব অমন সময় ভার্সিটি
লাইফের স্মৃতি বিজরিত একটা স্থানের কথা মনে
আসল।মায়ার টানে চলে গেলাম সেখানে।তেমন
একটা পরিবর্তন আসে নি।তখন যেমন ফাকাফাকা ছিল
এখনো এমনি আছে।রোদের তাপে সেই
পরিচিত গাছের ছায়ায় বসলাম ততক্ষনে আমি পুরো
ঘেমে গেছি।হঠাৎ করেই পিছনে কোন
মেয়েলি কণ্ঠস্বর এর আভাস পেয়ে পিছনে
তাকালাম,দেখি নীলিমা আমায় ডাকছে,,,,,
:এই নেন।(মেয়েটি মানে নীলিমা আমার দিকে
একটা সেভেন আপ এগিয়ে দিল)
:না না,থাক আমার লাগবে না।ধন্যবাদ(যদিও অনেক ইচ্ছা
ছিল নেওয়ার তবুও ভদ্রতা বলে একটা কথা আছে)।
(আমি)
:নিন।মানুষ মানুষের জন্যই।আপনাকে এত ফরমালিটি
দেখাতে হবেনা আমি সব বুঝি।আর এটা আপনাকে
ফ্রি দিচ্ছিনা শুধে আসলে শোধ করিয়ে নেব
(অনেকটা হাসিমাখা মুখেই নীলিমা বলল)।
:হা হা হা,সে তো বটেই।(আমি)
নীলিমার হাত থেকে বোতলটা নিয়ে এক
ঢোকে শেষ করে ফেললাম।আসলে অনেক
তৃষ্ণা পেয়েছিল।যাইহোক বোতলটা ওকে
দিতেই ও চলে গেল।অবশ্য আবার ডেকে
ধন্যবাদটা দিয়েছিলাম।
সেভেন আপ খেয়ে একটু স্বস্তি লাগছিল।প্রায়
কিছুক্ষণ বসে থাকার পর যখনি উঠে যাব তখনি আবার
মেয়েলি ডাক।কিন্ত এবার একটা না প্রায় পাচটা
একসাথে।পিছনে ঘুরে তাকালাম।মেয়েগুল
ো ঠেলেঠুলে নীলিমাকে আমার দিকে এগিয়ে
দিল।আমি ততক্ষনে বুঝে গেছি শুধ নিতে আসছে
পরে পুরো ঘটনা শুনে বুঝলাম শুধ আর আসল তো
নিবেই সাথে আরও কিছু বোনাসও নিবে।কারন
নীলিমাকে সামনে ঠেলে দিতেই ও সব উগলে
দিল,,,,
:আসলে ভাইয়া আমরা সবাই ফুচকা খাইছি বাট বিলটা একটু
বেশিই আসছে।তাই আসলে আপনি যদি আসলে
মানে,,,(একদম নিচের দিকে তাকিয়ে লজ্জাভরা মুখ
নিয়ে বলছে।দেখে বেশ মায়াই লাগল আর তার
সাথে তোতলাচ্ছে বেশ বলতে অনেক সুন্দর
লাগছে)
আমি ওকে মানে নীলিমাকে থামতে বললাম,,,,,
:হুম,বুঝছি সমস্যা কি।চল আমার সাথে, দোকান টা
দেখিয়ে দাও।(আমি)
দেখলাম সবার মাঝে হাসির একটা রোল পরে
গেল।কিন্তু নীলিমা হাসছেনা।ও আমার সাথে একটু
এগিয়ে আমাকে দোকানটা দেখিয়ে দিল।আমি
ভিতরে যেয়ে বিল কত তা জিজ্ঞাসা করলাম।উত্তর
শুনে তো আমি পুরাই থ মেরে গেলাম।দুই
হাজারের উপরে বিল আসছে।এটাও বুঝলাম যে
মেয়েগুলার খাওয়ার পরিমান ও আইটেম কি আর
কেমন ছিল আর এও ভালভাবেই বুঝলাম যে আমাকে
বোকা বানানো হয়েছে।যাই হোক বিল দিয়ে
দিলাম।পালটা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটা
সেভেন আপ নিয়ে সেই মেয়েগুলোর
কাছেই গেলাম।ওদের মাঝে নীলিমার দিকে
সেভেন আপের বোতলটা এগিয়ে দিয়ে
বললাম,,,,
:তোমার শুধ আর বোনাসটা দিয়ে এলাম।এবার
আসলটা নাও।(আমি)
আমার কথা শুনে নীলিমার মুখটা কালো হয়ে গেল।
ওর হাতের কাছে বোতলটা রেখেই কোন কথার
অপেক্ষা না করে চলে গেলাম।আসলে কিছুই
বলতে চাইনি কিন্তু ব্যক্তিত্ব তে আঘাত লাগায়
বলতে হল।
আজ টের পাচ্ছি হয়ত সেদিন নীলিমাকে অপমান
করার জন্যই আজ ওর ভাই এমন করল। নিজেকে খুব
দোষী মনে হচ্ছে।যদিও ও আমাকে অপমান
করেছিল কিন্তু আমার ওকে অপমান করা মোটেও
ঠিক হয়নি।
ওসব কথা ভাবতে ভেবতেই মার আওয়াজ পেলাম,মা
আমাকে ডাকছে,,,
:আবির,খেতে আয় বাবা।এমনি আজ তোর মুখের
দিকে তাকানো যাচ্ছেনা তারউপর এক্সিডেন্ট
করেছিস।আয় বাবা জলদি আয়।
ওহ হ্যা আমি আবির।নিজের পরিচয়টা দিতেই ভুলে
গেছি।আসলে আজকে আমার যা খাতিরদারি হইছে
পারলে নিজের চৌদ্দগুস্টির নাম ভুলে যাই।যাই হোক
একটা ভাল সফটওয়্যার কম্পানি তে জব করি।একজন
ভাল প্রোগ্রামার ও কোডার হিসেবে সুপরিচিত তাই
মানিব্যাগটাও একটু আধটু ফুলে থাকে।নিজের বারি গাড়ি
মানে চারচাকা না থাকলেও দুই চাকা আছে সাথে একটা
ছোট ফ্লাটও আছে।আমি মাকে নিয়ে এখানে
থাকি।আর একটা বড় বোন আছে যিনি সবসময়
একজনকে ঝারির উপর রাখেন মানে আপু বিবাহিত তাই
আর আমাদের সাথে তেমন একটা থাকে না।
মার কথায় গিয়ে খেয়ে আসলাম।তারপর সবরকমের
চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।রাত পেরিয়ে সকাল
যে কখন হল বুঝতেই পারি নি আসলে একটা
ঘোরের মাঝে ছিলাম।কারন শরীরটা খুব ক্লান্ত ছিল
তাই মাও আর ডাকাডাকি করেননি।ঘড়িতে সময়
দেখতে দেখতে সূর্য মামাকে হাই দিয়ে ঘুম
থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিস এর জন্য রেডি
হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।আজ হালকা দেরি
হয়ে গেল তাই বাইক টা বের করলাম তাহলে রিকশা
আর বাস এর অপেক্ষায় সময় নষ্ট হবেনা।
বাইকটা বেশ আস্তেই চালাচ্ছি। যেই মোড় টা ক্রস
করে মেইন রোডে উঠব ওমনি দেখি নীলিমা
(বজ্জাতের বোন মিস ডেঞ্জারাস)মোড়ে
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।ওকে দেখে আমি
একটা নয় দুইটা গিয়ার মেরে পিকাপটা বাড়িয়ে দিয়ে
বাইকের গতি বারালাম।আর এখানেই ঘটল বিপত্তি।ও
হঠাৎ করেই আমার বাইকের সামনে চলে আসল।
আমি কিছু বুঝার আগেই দেখি আমার হাতের পাচ
+পায়ের পাচটা আঙুল আমার বাইকের তথাকথিত ব্রেক
জিনিসটিকে খুব শক্ত করেই চেপে ধরল আর
অমনি আমি বাইকসহ পুরাই ফিল্মি স্টাইলে স্লিপ খেয়ে
উস্টা খেতে খেতে নিউটন এর ৩য় সূত্রের মত
রাস্তার বীপরিতমুখী রিএকশন উপভোগ করতে
করতে অবশেষে থামলাম।মাথাটা তুলতেই মনে হয়
আমার অর্ধেক জান বের হয়ে গেল।পুরো
শরীর ব্যথা করছে,প্রিয় শার্টটা ছিড়ে একাকার।রক্ত
পরে চারপাশটা কেমন যেন হয়ে গেছে।দেখি
নীলিমা আমাকে তুলতে তুলতে সরি বলছে।তখন
কেন জানি আমার মাথায় কিছুই খেলছিল না।চোখে
আবছা আবছা দেখছিলাম।পৃথিবীটা অন্ধকার লাগছিল।
দৃষ্টি ক্ষিণ হয়ে আসল। আমার আর কিছুই মনে
নেই।
ঘুম ভাংতেই দেখি হাসপাতালের সেই সাদা
বেডগুলোতে লাশের মত শুয়ে আছি।বুঝে
উঠতে সময় লাগল কিন্তু বুঝলাম এখনো বাঁচে আছি।
হাসিমাখা মুখখানা নিয়ে যেই পাশে তাকালাম সেই আবার
টাস্কি খেলাম।কারন একটাই নীলিমা আমার দিকে
তাকিয়ে আছে।তাকিয়ে আছে মানে ঘুমোচ্ছে
কিন্তু মুখটা আমার দিকে।চোখের নিচে কাল দাগ
পরে গেছে।দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত,
খুব ক্লান্ত।এই প্রথম ওকে এতটা কাছে থেকে
দেখলাম।ব্যথাগুলো পালিয়ে যেতে লাগল।মনে
হতে লাগল কেউ আমার সব কষ্টগুলোকে ধূলিসাৎ
করে দিচ্ছে।অনিচ্ছাস্বত্তেও তাকিয়ে আছি তো
আছিই।একটা মেয়ে কে যে এতটা ভাল লাগতে
পারে তা কিছুক্ষণ আগেও অসম্ভব মনে হত আর
এখন সেই ভাললাগা বেরেই চলছে।মাঝে মাঝে
ইচ্ছে হচ্ছে যেন ওর চুলগুলো কানে গুজে
দেই।ইচ্ছেটাকে প্রশ্রয় দিব এইসময়েই নীলিমা
আবির মানে আমার নাম ধরে চিৎকার করেই আমার
হাতটা ধরে কাঁদতে লাগল।আমি তখনো ওর মুখের
দিকে তাকিয়ে আছি,আমার মনের গভীরতা মাপছি।
কতটুকু ডুবে আছি জানিনা কিন্তু হাতটাকে শক্ত করে
ধরলাম।নীলিমা আমার দিকে তাকাল।ওর
চোখগুলোর কথা বুঝতে আমার কষ্ট হলনা।মনের
ব্যবধান টা যে খুব বেশি নেই তা বুঝতে পারলাম।ও
আরও শক্ত করে হাতটা ধরল।নিজের ছায়াকে যেন
আবার নতুন করে পেলাম,তাই হারিয়ে যাওয়ার ভয় হলনা
কিন্তু হাতটা ধরেই থাকলাম।
ভাবতে ভাবতেই চোখে পানি চলে আসল।
ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। দেখি নীলিমার ফোন।
বুঝলাম ভয় পাচ্ছে।আসলে একা থাকতে প্রচন্ড ভয়
পায়তো।মনের অজান্তেই চোখে জল চলে
আসল পুরনো দিন গুলোর কথা ভেবে। আসলে
সেদিন নীলিমাকে দেখেই বুঝেছিলাম মেয়েটা
আমায় কত ভালবাসে।আর হাসপাতাল থেকে বাসায়
ফেরার পথে ও আমায় সব খুলে বলে। আমার প্রতি
ওর লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়াল রাখা।বাসায় এসে মাকে
শাক-সবজি আনতে বলা।সব ছিল ভালবাসা আর সাথে
পাগলামিও ছিল কিন্তু যা ছিল আমার জন্যই ছিল।আমায় খুব
ভালবাসত আর ওর বান্ধবিদের সেটা জানা ছিল কারন
ওদের দিয়েই আমার গোয়েন্দাগিরি করত ও।তাই
সেদিন ভার্সিটিতে আমাকে দেখতেই ওর বান্ধবিরা
আমার কাছ থেকে খাওয়ার বায়না ধরে।ও মানতে না
চাইলেও ওকে দিয়েই বলায় আর আমি ভেবেছিলাম
ও আমাকে বোকা বানিয়েছিল তাই উলটা ওকেই
অপমান করলাম।মেয়েটা সেদিন সারাদিন-সারারাত
কেঁদেছিল।পরে ওর ভাই ভার্সিটি এর কোন একটা
ছেলের কাছ থেকে খবর পায় যে আমি ওকে
অপমান করছি।আর সেজন্যেই আমার সেই হাল
করেছিল।অবশ্য পরে নীলিমা ওর ভাইকে সব
বুঝিয়ে বলে যার ফলে তিনি নিজের ভুল বুঝতে
পারে।আর সেজন্যই নীলিমা সেদিন আমাকে স্যরি
বলার জন্য আসে।আসলে খুব এক্সাইটেড ছিল তাই
বাইকের সামনে চলে আসে।আর আমি ওইজন্যই
এক্সিডেন্ট টা করি ।আর তারপরের ঘটনা তো
আপনারা জানেনই।কি????!!!! জানেন না ।তাহলে
আরেকাটু কষ্ট করে পড়ুন।
সেদিন হাসপাতাল থেকে আসার পথে নীলিমার
কথাগুলো শোনার পর বাসায় এসে ওর কথাগুলো
ভাবতে লাগলাম।পরে বিকেলের দিকে নীলিমার
ভাই আমাদের বাসায় এসে আমাকে দেখলেন।
আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করলেন।আসলে তিনি
খুব লজ্জিত ছিলেন।আর নীলিমা হয়ত উনাকে
বলেছিল যে ও আমাকে ভালবাসে।আর আমি
যথেষ্ট ভাল ছেলে হওয়ায় বিয়ের প্রস্তাব টা
দিয়েই দিলেন।অবশেষে সবার সম্মতিতে
আমাদের বিয়েটা হয়।আর আজ সেই বিয়ের
তৃতীয় বছর পূরণ হলো আর আমার মনেই নাই।
কাজের চাপে একদম ভুলেই গেছি।আর এজন্যেই
মহারাণী আমায় ঘরে ঢুকতে দেননি।তাই ছাদে
আসলাম।আর হঠাৎ করেই পুরনো দিনগুলোর কথা
মনে পরে গেল।আমার সেই নীলিমাটা একটুও
পাল্টায় নি।এখনো পাগলিই রয়ে গেছে।তার ভাই
আগের মত এখন বজ্জাত না হলেও ও মানে
নীলিমা এখনো ডেঞ্জারাসই আছে।তাইতো
এখানে মশার কামড় খাচ্ছি আর আপনাদের আমাদের
প্রেমের অদ্ভুত কাহিনিটা শুনাচ্ছি।নাহ আর থাকা যাবেনা
আমার পাগলিটা ফোন দিয়েই যাচ্ছে খুব ভয় পাচ্ছে
মনে হয়।যাই নাহলে পরে আবার বাসায় ঢুকার এই
চান্সটাও মিস করবো।আগে আমার বোন অন্যরে
নাচাইত আর এখন আমার পাগলি বউটা আমাকে নাচায়।
আমার অবশ্য ভালই লাগে ওর পাগলামি গুলা।আর আপনারা
কিন্তু ওকে বলবেননা যে আমি ওকে পাগলি বলছি
খুব অভিমান করবে।আমার পাগলিটা খুব অভীমানি আর
এই অভীমানি পাগলিটাকে আমি খুব খুব খুব ভালবাসি।
Written by:স্পর্শের বাইরে অসীম আমি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন